২০২০ ও ২০২১ সালের আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার উঠল লেখক মশিউল আলম, আমিনুল ইসলাম ও স্বকৃত নোমানের হাতে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কার এবং ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেওয়া হয়।
একই অনুষ্ঠানে ‘আইএফআইসি সংস্কৃতিরত্ন সম্মাননা ২০২০’-এ ভূষিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর মননশীল ও সৃজনশীল দুটি বিভাগে দুজন লেখককে ‘সাহিত্য পুরস্কার’ দিয়ে আসছে আইএফআইসি ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় পুরস্কারের ১২তম বছরের আয়োজন সম্পন্ন হলো গতকাল।
বিকেল ৪টায় রাজধানীর পল্টনে আইএফআইসি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এই পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষাবিদ, টিভি ব্যক্তিত্ব ও লেখক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং অতিথি হিসেবে নাট্য ব্যক্তিত্ব ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক বিশ্ব সভাপতি রামেন্দু মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটির ছিল দুটি পর্ব। প্রথমটিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বিজয়ীদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানানো হয়। বলা হয়, করোনা অতিমারির কারণে ওই দুই বছরের বিজয়ীদের সম্মাননা জানানো সম্ভব হয়নি। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে সৃজনশীল বিভাগে ‘মায়ানগর’ গ্রন্থের জন্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, মননশীল বিভাগে ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত : নজরুল জীবনী’ গ্রন্থের জন্য লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ, ২০১৯ সালে মননশীল বিভাগে ‘ভাষা আন্দোলন : টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া’ গ্রন্থের জন্য কবি, প্রবন্ধকার ও গবেষক আহমদ রফিক এবং সৃজনশীল বিভাগে ‘আগস্ট আবছায়া’ গ্রন্থের জন্য কবি ও কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিনকে সম্মাননা হিসেবে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের পুরস্কারের অর্থ ও ক্রেস্ট আগেই দেওয়া হয়েছিল।
পরের পর্বে ২০২০ ও ২০২১ সালের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জন্য সৃজনশীল বিভাগে সাংবাদিক ও লেখক মশিউল আলম পুরস্কৃত হয়েছেন ‘দুধ’ শিরোনামের বইয়ের জন্য। ২০২১ সালের মননশীল বিভাগে ‘নজরুলসংগীত : বাণীর বৈভব’ শিরোনামের বইয়ের জন্য কবি ও গবেষক আমিনুল ইসলাম ও সৃজনশীল বিভাগে ‘উজানবাঁশি’ শিরোনামের উপন্যাসের জন্য স্বকৃত নোমান পুরস্কার পেলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে করোনাকালেও পুরস্কার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। পরবর্তী সময়ে এ কার্যক্রম উদাহরণ হিসেবে থাকবে।’
লেখক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘এই সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিতর্ক শুনিনি। এ কারণে আইএফআইসি ব্যাংকের সাহিত্য পুরস্কার সম্মাননা পেয়ে আমি গর্বিত। যে বইটি নিয়ে আমাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তা আমার আত্মজীবনীমূলক বই।’
বইপড়া আন্দোলনের মাধ্যমে আলোকিত মানুষ গড়ায় ব্রতী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘অর্থ সম্পদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্ম, শিল্প ও সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতির বিকাশে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা আরো বাড়াতে হবে।’
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমি এখনো জানি না কিভাবে এখানে বিজয়ী নির্বাচিত হন। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কারা আছেন এ বিষয়টিও আমার জানা নেই। গোপনীয়তা রক্ষা করে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।’
অনুষ্ঠানে আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ এ সারওয়ার, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ গুণীজন উপস্থিত ছিলেন।